গুগল এডসেন্স এপ্রুভ পাওয়ার সঠিক ও সেরা নিয়ম অনেকে জানেন না ফলে নিজের ওয়েবসাইটে গুগল এডসেন্স এপ্রুভ করাতে পারেন না। গুগল এডসেন্স একটি জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম যা ওয়েবসাইট মালিকদের তাদের সাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দেয়।
তবে, অ্যাডসেন্স এপ্রুভ পেতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। গুগল তার বিজ্ঞাপনী ইকোসিস্টেমকে সুস্থ এবং ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপদ রাখতে এই নিয়মাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করে।
গুগল এডসেন্স এপ্রুভ পাওয়ার সঠিক ও সেরা নিয়ম ভূমিকাঃ
ডিজিটাল বিশ্বে কন্টেন্ট নির্মাতাদের জন্য গুগল অ্যাডসেন্স অর্থ উপার্জনের এক দারুণ সুযোগ করে দিয়েছে। একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে আয় করার জন্য অ্যাডসেন্স অন্যতম জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। তবে, এই সুযোগ পেতে হলে গুগল কর্তৃক নির্ধারিত কিছু কঠোর নিয়মকানুন এবং নির্দেশিকা মেনে চলতে হয়।
অনেকেই অ্যাডসেন্স অনুমোদনের জন্য আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হন, যার মূল কারণ হলো গুগলের নীতিমালার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণার অভাব। এই ব্লগ পোস্টে আমরা অ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার সঠিক ও সেরা নিয়মাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
একটি মানসম্মত ওয়েবসাইট তৈরি থেকে শুরু করে গুগলের প্রোগ্রাম নীতি অনুসরণ করা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা তুলে ধরা হবে। সঠিক কৌশল এবং নীতি অনুসরণ করে আপনিও আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সফলভাবে অ্যাডসেন্স অনুমোদন অর্জন করতে পারবেন।
অ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার জন্য যে প্রধান নিয়মগুলো মানতে হবে, তা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো এই আর্টিকেলেঃ
আপনার নিজস্ব এবং উচ্চমানের কন্টেন্ট – Unique and High-Quality Content
- মৌলিকতা (Originality): আপনার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কন্টেন্ট সম্পূর্ণ মৌলিক হতে হবে। অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে কপি-পেস্ট করা কন্টেন্ট গুগল এডসেন্স অনুমোদন করে না। এমনকি সামান্য পরিবর্তন করেও যদি কন্টেন্ট কপি করা হয়, তা ধরা পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আকর্ষণীয় এবং মূল্যবান (Engaging and Valuable): আপনার কন্টেন্ট দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং তথ্যবহুল হতে হবে। এমন কন্টেন্ট তৈরি করুন যা ব্যবহারকারীদের আগ্রহ ধরে রাখে এবং তাদের কোনো সমস্যার সমাধান করে বা নতুন কিছু শেখায়। শুধুমাত্র সার্চ ইঞ্জিনের জন্য তৈরি করা “ডোরওয়ে” পৃষ্ঠা (Doorway pages) বা কম মূল্যের অ্যাফিলিয়েট কন্টেন্ট অ্যাডসেন্স নীতি লঙ্ঘন করে।
- পর্যাপ্ত কন্টেন্ট (Sufficient Content): আপনার ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত পরিমাণে কন্টেন্ট থাকতে হবে। সুনির্দিষ্ট সংখ্যক আর্টিকেল না থাকলেও, সাধারণত ২৫-৩০টি মানসম্মত এবং দীর্ঘ (৮০০-১০০০+ শব্দ) আর্টিকেল থাকলে এডসেন্স পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
গুগল এডসেন্স প্রোগ্রাম নীতি মেনে চলা – Compliance with AdSense Program Policies
গুগল অ্যাডসেন্সের কঠোর প্রোগ্রাম নীতি রয়েছে, যা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এই নীতিগুলো নিম্নলিখিত বিষয়গুলো কভার করে:
আরো পড়ুনঃ কাজ না করে কিভাবে টাকা উপার্জন করা যায়? অলস মানুষের জন্য স্মার্ট ইনকামের সুযোগ
-
নিষিদ্ধ কন্টেন্ট (Prohibited Content):
- প্রাপ্তবয়স্ক বা যৌন উত্তেজক কন্টেন্ট।
- হিংসাত্মক কন্টেন্ট, ঘৃণা ছড়ানো বা বৈষম্যমূলক কন্টেন্ট।
- অবৈধ কার্যকলাপ সম্পর্কিত কন্টেন্ট (যেমন: মাদক, অস্ত্র, হ্যাকিং, পাইরেটেড সফটওয়্যার/মিডিয়া ডাউনলোড)।
- কপিরাইট লঙ্ঘনকারী কন্টেন্ট।
- জুয়া বা ক্যাসিনো সম্পর্কিত কন্টেন্ট।
- তামাক বা অ্যালকোহল সম্পর্কিত কন্টেন্ট।
- জাল পণ্য বা পরিষেবার প্রচার।
- বিস্ফোরক বা বিপজ্জনক পণ্যের প্রচার।
-
বিজ্ঞাপন প্লেসমেন্ট (Ad Placement):
- বিজ্ঞাপন এমনভাবে বসানো যাবে না যাতে ভুলবশত ক্লিক পড়ে। যেমন: ডাউনলোডের বাটনের পাশে বা গেমের কন্ট্রোলের খুব কাছাকাছি বিজ্ঞাপন স্থাপন করা যাবে না।
- বিজ্ঞাপন এমন কোনো কন্টেন্টের পাশে রাখা যাবে না যা নীতি লঙ্ঘন করে।
- পপ-আপ, সফটওয়্যার বা Google-কে নকল করে এমন সাইটে AdSense কোড ব্যবহার করা যাবে না।
- এডসেন্স কোডে কোনো ধরনের পরিবর্তন করা যাবে না।
-
ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা (User Experience):
- আপনার ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি ভালো অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।
- ওয়েবসাইটে অবাঞ্ছিত রিডাইরেক্ট, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড শুরু করা, ম্যালওয়্যার বা পপ-আপ যা ব্যবহারকারীকে সাইট নেভিগেট করতে বাধা দেয় – এমন কিছু থাকা যাবে না।
- ওয়েবসাইটের গতি দ্রুত হতে হবে।
প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা – Technical Requirements
- আপনার নিজস্ব ডোমেইন (Owned Domain): আপনি যে ওয়েবসাইট বা ব্লগ অ্যাডসেন্স অনুমোদনের জন্য জমা দিচ্ছেন, সেটির সম্পূর্ণ মালিকানা আপনার থাকতে হবে। সাধারণত, ফ্রি ডোমেইন (যেমন .tk, .ml) বা সাবডোমেইন (যেমন blogspot.com এর সাবডোমেইন) এর জন্য অ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়া কঠিন। একটি টপ-লেভেল ডোমেইন (.com, .net, .org, .info) ব্যবহার করা উচিত।
- HTML সোর্স কোডে অ্যাক্সেস (Access to HTML Source Code): আপনার সাইটের HTML সোর্স কোডে আপনার অ্যাক্সেস থাকতে হবে যাতে আপনি এডসেন্স কোড স্থাপন করতে পারেন।
- রেসপন্সিভ ডিজাইন (Responsive Design): আপনার ওয়েবসাইটের ডিজাইন রেসপন্সিভ হতে হবে, যাতে এটি মোবাইল, ট্যাবলেট এবং ডেস্কটপসহ যেকোনো ডিভাইসে সঠিকভাবে প্রদর্শিত হয়।
- সঠিক নেভিগেশন (Clear Navigation): আপনার সাইটের নেভিগেশন (মেনু, লিংক) স্পষ্ট এবং সহজ হতে হবে, যাতে ব্যবহারকারীরা সহজেই সাইটের বিভিন্ন পেজে প্রবেশ করতে পারে।
- গুরুত্বপূর্ণ পেজ (Essential Pages): আপনার ওয়েবসাইটে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেজ থাকা আবশ্যক:
- Privacy Policy (গোপনীয়তা নীতি): আপনার সাইট কীভাবে ব্যবহারকারীদের ডেটা সংগ্রহ, ব্যবহার এবং সুরক্ষিত করে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
- About Us (আমাদের সম্পর্কে): আপনার ওয়েবসাইট এবং আপনার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য প্রদান করুন।
- Contact Us (যোগাযোগ): ব্যবহারকারীদের আপনার সাথে যোগাযোগের জন্য একটি মাধ্যম (ইমেল, কন্টাক্ট ফর্ম) প্রদান করুন।
- Disclaimer (দাবিত্যাগ): যদি প্রয়োজন হয়।
বয়স এবং আইনি যোগ্যতা – Age and Legal Eligibility
- বয়স ১৮+: অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের জন্য আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয়, তাহলে আপনার পিতা-মাতা বা অভিভাবকের ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে Google অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাডসেন্স-এর জন্য আবেদন করতে হবে। সেক্ষেত্রে সমস্ত পেমেন্ট সেই প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির নামেই হবে।
সাইটের বয়স এবং ট্র্যাফিক – Site Age and Traffic – Unofficial but Important
যদিও গুগল সরাসরি নির্দিষ্ট বয়স বা ট্র্যাফিকের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে না, তবে কিছু বিষয় রয়েছে যা এডসেন্স অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ায়:
আরো পড়ুনঃ মোবাইল থেকে ভাইরাস দূর করার উপায় – মোবাইল ভাইরাস ক্লিনার
- সাইটের বয়স: অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, নতুন ওয়েবসাইটের চেয়ে অন্তত ৩-৬ মাস পুরনো ওয়েবসাইটগুলো এডসেন্স পেতে সুবিধা পায়। এর কারণ হলো, এই সময়ের মধ্যে ওয়েবসাইটটি গুগলের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে এবং পর্যাপ্ত কন্টেন্ট তৈরি হয়।
- ওয়েবসাইট ট্র্যাফিক: সাইটে কিছু পরিমাণ অর্গানিক ট্র্যাফিক থাকলে এডসেন্স অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ে। গুগল চায় এমন ওয়েবসাইটগুলোতে বিজ্ঞাপন দেখাতে, যেখানে সম্ভাব্য বিজ্ঞাপনদাতাদের দর্শক আছে।
- গুগল ইনডেক্সিং: আপনার ওয়েবসাইটের পোস্টগুলো যেন গুগলে ইনডেক্স করা থাকে, তা নিশ্চিত করুন। Google Search Console ব্যবহার করে আপনার সাইটের ইনডেক্সিং অবস্থা পরীক্ষা করতে পারেন।
গুগল এডসেন্স এপ্রুভ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- অন্যান্য বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক (Other Ad Networks): এডসেন্স আবেদনের আগে আপনার ওয়েবসাইটে অন্য কোনো বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের বিজ্ঞাপন থাকলে সেগুলো সরিয়ে ফেলা ভালো।
- পপ-আপ উইন্ডো (Pop-up Windows): পপ-আপ উইন্ডো বা ফেসবুক লাইক বক্সের মতো জিনিস যা ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা নষ্ট করে, তা পরিহার করুন।
- Google Search Console এবং Google Analytics: আপনার ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স ট্র্যাক করতে এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এই টুলগুলো ব্যবহার করুন।
- ধৈর্য (Patience): অ্যাডসেন্স অনুমোদনের জন্য আবেদন করার পর ধৈর্য ধরুন। গুগল আপনার সাইটকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে। এই প্রক্রিয়া কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
অ্যাডসেন্স প্রত্যাখ্যান হলে করণীয় কি?
যদি আপনার এডসেন্স আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়, গুগল সাধারণত কারণ জানিয়ে একটি ইমেল পাঠায়। সেই কারণগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সে অনুযায়ী আপনার ওয়েবসাইটে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন। এরপর আবার আবেদন করুন।
গুগল এডসেন্স এপ্রুভ পাওয়ার জন্য সংক্ষেপে চেকলিস্ট দেখে নিন
প্রয়োজনীয়তা | রয়েছে কি? |
---|---|
ইউনিক কনটেন্ট (২৫-৩০টি পোস্ট) | ✔️ |
About, Contact, Privacy পেজ | ✔️ |
মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ডিজাইন | ✔️ |
কপিরাইট ক্লিয়ার কনটেন্ট | ✔️ |
কোনো নিষিদ্ধ বিষয় নেই | ✔️ |
নিজস্ব ডোমেইন | ✔️ |
গুগল এডসেন্স এপ্রুভ পাওয়ার জন্য সর্বশেষ পরামর্শ
গুগল অ্যাডসেন্স থেকে অনুমোদন পাওয়া অনেক কন্টেন্ট নির্মাতার কাছে একটি স্বপ্নের মতো, যা ওয়েবসাইট থেকে আয়ের পথ খুলে দেয়। তবে, এটি কোনো রাতারাতি সাফল্যের বিষয় নয়; বরং এটি ধৈর্য, পরিশ্রম এবং গুগলের নীতিমালা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলার ফল।
এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, উচ্চমানের, মৌলিক কন্টেন্ট তৈরি করা, ব্যবহারকারী-বান্ধব ওয়েবসাইট ডিজাইন করা এবং অ্যাডসেন্সের প্রোগ্রাম নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা অপরিহার্য। প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণের পাশাপাশি, আপনার সাইটে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠাগুলো (যেমন: প্রাইভেসি পলিসি, অ্যাবাউট আস, কন্টাক্ট আস) যোগ করাও জরুরি।
যদি আপনার আবেদন প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে হতাশ না হয়ে কারণগুলো বিশ্লেষণ করুন, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন এবং পুনরায় আবেদন করুন। মনে রাখবেন, গুগলের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি নিরাপদ এবং উন্নত মানের বিজ্ঞাপনী ইকোসিস্টেম বজায় রাখা।
এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য অ্যাডসেন্স অনুমোদন অর্জন করা সম্ভব হবে এবং আপনি আপনার ডিজিটাল জার্নিতে সফলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবেন। আশা করি সম্পূর্ণ বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন। ধন্যাবাদ।