কুরবানী ওয়াজিব না ফরজ – কুরবানী ঈদ ২০২৫ তারিখ? ২০২৫ সালে কুরবানী ঈদ (ঈদুল আযহা) সম্ভবত ৭ই জুন, শনিবার। কুরবানী ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রতি বছর ঈদুল আযহার সময় মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পশু কুরবানী করে থাকেন। তবে কুরবানী ওয়াজিব নাকি ফরজ, এ নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে।
এছাড়াও, ২০২৫ সালে কুরবানী ঈদ কবে পালিত হবে, তা-ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ব্লগ পোস্টে আমরা কুরবানী ওয়াজিব না ফরজ, কুরবানী ঈদ ২০২৫ সালের তারিখ এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মাসআলা ও হাদিস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সাত ভাগে কুরবানী দেওয়ার হাদিস
কুরবানীর পশুতে কয়জন শরীক হতে পারবে, এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, উট ও গরুতে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে। ভেড়া ও ছাগলে একজন শরীক হওয়াই উত্তম।
হাদিস: জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুদাইবিয়ার সফরে বের হলাম। তখন আমরা উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়েছিলাম।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৩১৮)
এই হাদিস স্পষ্টভাবে উট ও গরুতে সাতজন শরীক হওয়ার প্রমাণ বহন করে।
সাত ভাগে কুরবানী দেওয়ার দলিল
সাত ভাগে কুরবানী দেওয়ার প্রধান দলিল হলো উপরোক্ত হাদিসটি। এছাড়াও, অন্যান্য হাদিসেও এর সমর্থন পাওয়া যায়। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং উটও সাতজনের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।” (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং ১৫০১)
এসব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাতজন মিলে একটি উট অথবা একটি গরু কুরবানী দিতে পারে।
কুরবানী কি ভাগে দেওয়া যায়
হ্যাঁ, কুরবানী ভাগে দেওয়া যায়। তবে তা শুধুমাত্র উট ও গরুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ভেড়া, ছাগল বা অন্যান্য ছোট পশুতে একজনের বেশি শরীক হওয়া উচিত নয়। যদি কেউ ছাগল বা ভেড়ায় একাধিক ব্যক্তি শরীক হন, তবে কুরবানী শুদ্ধ হবে কিনা, তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে উট ও গরুতে সাতজন পর্যন্ত শরীক হতে কোনো বাধা নেই।
৬ ভাগে কুরবানী দেওয়া যাবে কি
উট ও গরুতে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারবে, এর কম নয়। তাই যদি ছয়জন মিলে একটি উট বা গরু কুরবানী দেন, তবে তা জায়েজ হবে। শরীকের সংখ্যা সাতের কম হলে কোনো অসুবিধা নেই।
সাত শরীকে কুরবানী
সাত শরীকে কুরবানী দেওয়া সম্পূর্ণরূপে জায়েজ এবং সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যারা আর্থিক দিক থেকে দুর্বল, তাদের জন্য এটি একটি সুবিধাজনক উপায়। সাতজন মিলে একটি বড় পশু কুরবানী করলে প্রত্যেকেই কুরবানীর সাওয়াব লাভ করবে।
ভাগে কুরবানি দেওয়ার নিয়ম
ভাগে কুরবানী দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
- শরীকের সংখ্যা: উট ও গরুতে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারবে।
- নিয়ত: প্রত্যেক শরীকের নিয়ত খালেস হতে হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করতে হবে।
- মূলধন: যদি পশু কেনার সময় সকলে সমানভাবে অর্থ প্রদান করে, তবে তা উত্তম। তবে যদি কারো অংশ কম বা বেশি থাকে, তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। মূল বিষয় হলো সকলের সম্মতিতে পশুটি কুরবানী করা।
- গোশত বণ্টন: কুরবানীর পর গোশত সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া উত্তম। তবে যদি সকলে একমত হন, তবে কমবেশি হলেও কোনো সমস্যা নেই।
কোরবানি কয় নামে দেওয়া যায়
কুরবানী মূলত একটি পশু দ্বারা একজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে অথবা একটি পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। যদি কেউ সাত ভাগে কুরবানী দেয়, তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেক শরীকের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা, নামের সংখ্যা মুখ্য নয়।
কুরবানির প্রশ্ন উত্তর দলিল সহ
প্রশ্ন: কুরবানী কি ওয়াজিব নাকি ফরজ?
উত্তর: কুরবানী ওয়াজিব। এর স্বপক্ষে অনেক আলেম মত দিয়েছেন। তবে কিছু আলেমের মতে এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু অধিকাংশ আলেমের মত অনুযায়ী এটি ওয়াজিব।
প্রশ্ন: কুরবানী কার উপর ওয়াজিব?
উত্তর: প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন এবং আর্থিক সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের উপর কুরবানী ওয়াজিব।
প্রশ্ন: আর্থিক সামর্থ্য বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: আর্থিক সামর্থ্য বলতে বোঝায়, ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর পশু কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকা এবং তা তার দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খরচ বাদেই অতিরিক্ত হতে হবে।
প্রশ্ন: মহিলাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব কি?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি কোনো মহিলার কাছে কুরবানীর পশু কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকে, তবে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব।
কুরবানী কার উপর ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর কুরবানী ওয়াজিব। নিসাব পরিমাণ সম্পদ বলতে বোঝায়, কুরবানীর পশু কেনার মতো অতিরিক্ত অর্থ থাকা।
কুরবানী ঈদ ২০২৫ তারিখ
ইসলামিক চান্দ্র বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে, জিলহজ মাসের দশ তারিখে ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়। চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এই তারিখ পরিবর্তিত হতে পারে। তবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ইসলামিক স্কলারদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে কুরবানী ঈদ (ঈদুল আযহা) সম্ভবত ৭ই জুন, শনিবার অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে চাঁদ দেখার পর চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করা হবে।
কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করার বিধান কী
কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করা মুস্তাহাব। তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়। এই তিন ভাগ হলো:
- এক ভাগ নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য।
- এক ভাগ গরিব ও অভাবীদের জন্য।
- এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের জন্য।
তবে কেউ চাইলে সম্পূর্ণ গোশত নিজের জন্য রাখতে পারে অথবা সম্পূর্ণ গোশত দান করে দিতে পারে।
কুরবানীর আয়াত
কোরআন মাজিদে কুরবানী সম্পর্কে অনেক আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
- “অতএব, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর।” (সূরা কাওসার, আয়াত ২)
- “আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে সেই পশুটির উপর যা তিনি তাদেরকে রিযিক হিসেবে দান করেছেন।” (সূরা হজ্জ, আয়াত ৩৪)
কুরবানী ওয়াজিব না ফরজ
অধিকাংশ ইসলামিক আলেমের মতে কুরবানী ওয়াজিব। ওয়াজিব হলো এমন একটি ইবাদত যা শরীয়তের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ এবং তা পালন করা আবশ্যক। বিনা কারণে এটি পরিত্যাগ করলে গুনাহগার হতে হয়। তবে কিছু আলেম এটিকে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা বলেছেন, যার অর্থ হলো এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত এবং এটি নিয়মিত পালন করা উচিত।
কার উপর কুরবানী ওয়াজিব
কুরবানী সেই সকল প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম নর-নারীর উপর ওয়াজিব, যাদের কাছে ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর পশু কেনার মতো অতিরিক্ত অর্থ থাকে।
কুরবানী কার উপর ফরজ
কুরবানী ফরজ নয়, বরং ওয়াজিব। ফরজ হলো ইসলামের স্তম্ভগুলোর অন্যতম, যা প্রত্যেক মুসলমানের উপর অবশ্য পালনীয়। কুরবানী সেই স্তরের বাধ্যতামূলক ইবাদত নয়।
কুরবানীর ঈদ কত তারিখে
২০২৫ সালে কুরবানীর ঈদ সম্ভাব্যভাবে ৭ই জুন, শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। তবে চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে এই তারিখের পরিবর্তন হতে পারে।
সাত ভাগে কুরবানী দেওয়ার হাদিস
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুদাইবিয়ার সফরে বের হলাম। তখন আমরা উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়েছিলাম।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৩১৮)
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার দলিল
কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে অনেক দলিল রয়েছে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য হলো:
- সূরা কাওসারের দ্বিতীয় আয়াত যেখানে আল্লাহ তায়ালা কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন।
- বিভিন্ন হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়মিত কুরবানী করতে দেখা গেছে এবং তিনি এর গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন।
- সাহাবা কেরাম নিয়মিত কুরবানী করতেন।
কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়া যাবে কি
কুরবানীর সাথে আকিকা দেওয়া নিয়ে ইসলামিক আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিছু আলেমের মতে, যদি কেউ বড় পশু (উট বা গরু) কুরবানী করে এবং তাতে সন্তানের আকিকার নিয়ত করে, তবে তা যথেষ্ট হবে। তবে অধিকাংশ আলেমের মতে, আকিকার জন্য আলাদা পশু জবাই করাই উত্তম।
কুরবানী নিয়ে উক্তি
কুরবানী হলো ত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের প্রতীক। এটি আমাদের শেখায় কিভাবে আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করতে হয়। কুরবানী আমাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও সহানুভূতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।
কুরবানীর মাসায়েল আলকাউসার
আলকাউসার ইসলামিক স্কলারদের একটি নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট, যেখানে কুরবানী সংক্রান্ত বিভিন্ন মাসআলা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের ওয়েবসাইট থেকে আরও তথ্য জানতে পারেন।
ত্যাগ ও কুরবানী হাদিস
“যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)
এই হাদিস কুরবানীর গুরুত্ব এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী না করার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি প্রদান করে।
কুরবানী ঈদের শুভেচ্ছা
কুরবানী ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি আনন্দের দিন। এই দিনে একে অপরের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়। কুরবানী ঈদের শুভেচ্ছা হিসেবে সাধারণত বলা হয় “ঈদ মুবারক” অথবা “ঈদ আল-আযহা মুবারক”।
মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী দেওয়া যাবে কিনা
হ্যাঁ, মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী দেওয়া জায়েজ। যদি কোনো ব্যক্তি তার মৃত আত্মীয়-স্বজনের নামে কুরবানী করতে চান, তবে তা করতে পারেন। এর সাওয়াব মৃত ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাবে ইনশাআল্লাহ।
কুরবানী ওয়াজিব না ফরজ? কুরবানী ঈদ ২০২৫ তারিখ উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, কুরবানী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা আর্থিক সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব। ২০২৫ সালে কুরবানী ঈদ সম্ভবত ৭ই জুন, শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। এই পোস্টে কুরবানী সংক্রান্ত বিভিন্ন মাসআলা ও হাদিস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে খালেস নিয়তে কুরবানী করার এবং এর সাওয়াব লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
