বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত জেন নিন সঠিক তথ্য

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত অনেকে জানেন না আজকে জেনে নিন সঠিক তথ্য। বমি হওয়া একটি অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা, যা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। বমি হলে সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুবই জরুরি, কারণ ভুল খাবার পরিস্থিতি আরও খারাপ করতে পারে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করব বমি হলে কী ধরনের খাবার খাওয়া উচিত, কেন খাওয়া উচিত এবং কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। এই নির্দেশিকা আপনাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে।

বমি হলে কেন সঠিক খাবার জরুরি

বমি হওয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায়। এর ফলে ডিহাইড্রেশন এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। সঠিক খাবার গ্রহণ করলে এই ক্ষতি পূরণ হয় এবং শরীর দ্রুত সুস্থ হতে পারে। ভুল খাবার পেটের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বমি হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে কিন্তু বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত সেটা অনেকেই জানি না।

বমি হলে কী ধরনের খাবার খাবেন?

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত এখন সেটা জানবো। বমি হওয়ার পর প্রথম ধাপ হলো ধীরে ধীরে খাবার শুরু করা। শুরুতে হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার দিয়ে শুরু করা উচিত। এখানে কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির খাবার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

তরল খাবার এবং ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয়

বমি হওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শরীরের তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইটের অভাব পূরণ করা।

ORS (Oral Rehydration Saline): এটি ডিহাইড্রেশন মোকাবেলায় সবচেয়ে কার্যকর। ORS শরীরের প্রয়োজনীয় লবণ এবং চিনি সরবরাহ করে।
ডাবের জল: প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ ডাবের জল শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি হজমে সহজ এবং বমিভাব কমায়।
ফলের রস (পাতলা করে): আপেল বা আঙ্গুরের রস পাতলা করে পান করা যেতে পারে। তবে অ্যাসিডিক ফলের রস (যেমন কমলা বা লেবুর রস) এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো পেট খারাপ করতে পারে।
লবণ-চিনির শরবত: ঘরে তৈরি লবণ-চিনির শরবত ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে। এক গ্লাস জলে এক চিমটি লবণ এবং এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে তৈরি করা যায়।

আরো পড়ুনঃ শ্বাসকষ্ট হলে কি ঔষধ খেতে হবে জেনে নিন সঠিক তথ্য

আদা চা: আদা বমিভাব কমাতে দারুণ কাজ করে। হালকা আদা চা পান করলে পেটের অস্বস্তি কমে আসে। তবে দুধ বা বেশি চিনি ছাড়া পান করা উচিত।
হালকা স্যুপ/broth: চিকেন ব্রোথ বা ভেজিটেবল ব্রোথ শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং তরল সরবরাহ করে। এতে অল্প পরিমাণে লবণ যোগ করা যেতে পারে।

BRAT ডায়েট

বমি হওয়ার পর অনেকেই BRAT ডায়েট অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। BRAT হলো চারটি খাবারের আদ্যক্ষর:

B – Bananas (কলা): কলা পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস, যা বমি হওয়ার পর শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এটি সহজে হজমযোগ্য এবং পেটে হালকা।
R – Rice (ভাত): সাদা ভাত সহজে হজম হয় এবং পেটে কোনো অস্বস্তি তৈরি করে না। ভাজা ভাত বা পোলাও এড়িয়ে চলা উচিত।
A – Applesauce (আপেল সস): আপেল সস হজমে সাহায্য করে এবং এতে পেকটিন থাকে যা ডায়রিয়া কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
T – Toast (টোস্ট): সাদা পাউরুটির টোস্ট সহজে হজম হয় এবং এতে কোনো অতিরিক্ত চর্বি বা মসলা থাকে না। মাখন বা জ্যাম ছাড়া শুধু টোস্ট খাওয়া ভালো।

সহজপাচ্য শস্য ও কার্বোহাইড্রেট

BRAT ডায়েটের পাশাপাশি আরও কিছু শস্য ও কার্বোহাইড্রেট যোগ করা যেতে পারে:

ওটস: জল দিয়ে তৈরি হালকা ওটস সহজে হজম হয় এবং শক্তি যোগায়।
সুজি/সাবু: সুজি বা সাবু দিয়ে তৈরি জাউ বা পায়েস বমি হওয়ার পর বেশ উপকারী। এটি হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য।
সেদ্ধ আলু: সেদ্ধ আলু ম্যাশ করে সামান্য লবণ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি শক্তির ভালো উৎস।

প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান (ধীরে ধীরে)

একবার বমিভাব কমে গেলে এবং তরল খাবার হজম হতে শুরু করলে, ধীরে ধীরে প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যোগ করা যেতে পারে:

পাতলা প্রোটিন: সেদ্ধ মুরগির মাংস (চর্বিহীন), মাছের হালকা ঝোল বা ডাল খুব অল্প পরিমাণে যোগ করা যেতে পারে। খেয়াল রাখবেন যেন তেল-মসলা একদমই না থাকে।
হালকা সেদ্ধ সবজি: গাজর, লাউ, পেঁপে সেদ্ধ করে অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। এগুলো হজমে সাহায্য করে এবং ভিটামিন সরবরাহ করে।

বমি হলে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত তার পাশাপাশি কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে সেটাও জানাও জরুরি। কিছু খাবার বমিভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এগুলো কঠোরভাবে এড়িয়ে চলা উচিত:

  • তৈলাক্ত এবং ভাজা খাবার: এই ধরনের খাবার হজম করা কঠিন এবং পেটে অস্বস্তি বাড়ায়।
  • চর্বিযুক্ত খাবার: মাংসের চর্বি, বেশি তেল বা ঘি দিয়ে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • মসলাযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত ঝাল বা মসলাযুক্ত খাবার পাকস্থলীতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • দুগ্ধজাত পণ্য (প্রাথমিকভাবে): দুধ, দই, পনির ইত্যাদি কিছু মানুষের ক্ষেত্রে বমি হওয়ার পর হজমে সমস্যা করতে পারে। বমিভাব কমে গেলে অল্প পরিমাণে শুরু করা যেতে পারে।
  • অত্যধিক মিষ্টি খাবার: অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার বমিভাব বাড়াতে পারে।
  • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংকস ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে।
  • অ্যালকোহল: অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং পেটের অস্বস্তি বাড়ায়।
  • শক্ত বা আঁশযুক্ত খাবার: কাঁচা সবজি, বাদাম, বা আঁশযুক্ত ফল শুরুতে এড়িয়ে চলুন। এগুলো হজম করা কঠিন।
  • সাইট্রাস ফল: কমলা, লেবু, আঙুর ইত্যাদি অ্যাসিডিক ফল পেটের জ্বালাপোড়া বাড়াতে পারে।
    বমি হলে খাবার খাওয়ার নিয়মাবলী

সঠিক খাবার নির্বাচনের পাশাপাশি খাবার খাওয়ার পদ্ধতিও গুরুত্বপূর্ণ:

ধীরে ধীরে শুরু করুন: প্রথমদিকে অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ করুন এবং দেখুন শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
ছোট ছোট অংশে খান: একবারে বেশি না খেয়ে সারা দিনে অল্প অল্প করে বারবার খান।
ঠান্ডা বা ঘরের তাপমাত্রার খাবার: গরম খাবারের গন্ধ অনেকের বমিভাব বাড়িয়ে দেয়। ঠান্ডা বা ঘরের তাপমাত্রার খাবার গ্রহণ করুন।

আরো পড়ুনঃ শ্বাসকষ্ট হলে কি ঔষধ খেতে হবে জেনে নিন সঠিক তথ্য

ধীরে ধীরে পান করুন: একবারে বেশি তরল পান না করে অল্প অল্প করে চুমুক দিয়ে পান করুন।
শক্তির দিকে মনোযোগ দিন: ধীরে ধীরে এমন খাবার যোগ করুন যা আপনাকে শক্তি যোগাবে।
শুনুন আপনার শরীর কী বলছে: আপনার শরীর যদি কোনো খাবার গ্রহণ করতে না চায়, তাহলে জোর করবেন না।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বমি স্বল্পস্থায়ী হয় এবং ঘরোয়া চিকিৎসাতেই সেরে যায়। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বমি হওয়া: যদি বমি ২৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়।

  • তীব্র পেটে ব্যথা: বমির সাথে তীব্র পেটে ব্যথা থাকলে।
  • জ্বর: উচ্চ জ্বর বা কাঁপুনি সহ বমি হলে।
  • রক্ত বমি: বমিতে রক্ত থাকলে বা কালচে রঙের বমি হলে।
  • ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ: অতিরিক্ত তৃষ্ণা, শুষ্ক মুখ, কম প্রস্রাব, মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা দেখা দিলে।
  • তীব্র দুর্বলতা: যদি অতিরিক্ত দুর্বলতা অনুভব করেন এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে না পারেন।

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নিয়ে শেষ কথাঃ

বমি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও সঠিক যত্ন এবং খাবার নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করুন এবং কোনো রকম অস্বস্তি হলে খাবার বন্ধ রাখুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং শরীরকে সুস্থ হওয়ার সুযোগ দিন। এই নির্দেশিকা অনুসরণ করে আপনি বমি পরবর্তী অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন।

আপনার কি বমি হওয়ার পর কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেয়ে উপকার পেয়েছেন? কমেন্ট করে জানাতে পারেন!

Author Image
Tanore Computer
আমরা আপনাকে প্রযুক্তির দুনিয়ায় সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে সবসময় প্রস্তুত।

Leave a Comment

error: Content is protected !!